Header Ads

ওযুর নিয়ম

ওযুর নিয়ত ও দোয়া :

অজু করার শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়ার কথা হাদীসে এসেছে। {আবু দাউদ-১/১৪, তিরমিজী-১/১৩, কিতাবুল আজকার-২/২


উচ্চারনঃ নাওয়াইতু আন আতাওয়াজ্জায়া লিরাফয়িল হাদাসি ওয়া ইস্তিবাহাতা লিছছালাতি ওয়া তাকাররুবান ইলাল্লাহি তা’য়ালা।


অর্থ : আমি ওযুর নিয়ত করছি যে নাপাকি দূর করার জন্য বিশুদ্ধরূপে নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্য এবং আল্লাহ তা’য়ালা।


অযুর দোয়া বাংলা উচ্চারণঃ ( বিসমিল্লাহি আল্যিয়ুল আযিম। আলহামদুলিল্লাহি আলা দ্বীন-ই ইসলাম, আলইসলামু-হাক্কু, ওল কুফরে বাতীলুন, ওল ইসলামু নূরুন, ওল কুফরে জুল্বমাত )


অজুর শেষে পড়বেন


أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ


বাংলা উচ্চারণ– আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহূ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু। {সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৯৯১২, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১৬৯, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৭১৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৩৪, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৬০৭৪




পবিত্র কোরআনে বিশেষভাবে নামাজ ও পবিত্র কোরআন পড়ার আগে অজু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুসলমানদের মধ্যে শারীরিক পবিত্রতা লাভের জন্য গোসলের পরে অজুর স্থান। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের সুরা মায়িদায় বলা হয়েছে অজুর নিয়ম।


আল্লাহ বলেছেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমরা নামাজের জন্য দাঁড়াও তখন তোমাদের মুখ হাত কনুই পর্যন্ত ধোবে ও তোমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে নেবে, আর গিট পর্যন্ত ধোবে। যদি তোমরা অপবিত্র থাকো তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। যদি তোমরা অসুস্থ থাকো বা সফরে থাকো বা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে। আসো কিংবা স্ত্রীর সঙ্গে সংগত হও, আর পানি না পাও, তবে তাইয়াম্মুম করবে। পরিষ্কার মাটি দিয়ে এবং তা মুখে ও হাতে বুলিয়ে নেবে। আল্লাহ্ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না এবং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের ওপর তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জানাতে পারো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৬,


শরীর অপবিত্র হওয়ার কারণ হলো পায়খানা-প্রস্রাব করা, বায়ু নিঃসরণ, স্ত্রী সংসর্গ, অচেতন হওয়া বা ঘুমিয়ে পড়া, রক্তক্ষরণ ইত্যাদি। এই অপবিত্র অবস্থা থেকে পবিত্র অবস্থায় ফিরে আসার জন্য অজুর প্রয়োজন।


অজু তিন প্রকার: ফরজ, ওয়াজিব এবং মুস্তাহাব। নামাজের জন্য অজু ফরজ। কাবা শরিফ তওয়াফের জন্য অজু করা ওয়াজিব। গোসল ও ঘুমানোর আগে অজু করা মুস্তাহাব।


অজু করার নিয়ম হলো: 

বিসমিল্লাহর সঙ্গে প্রথমে নিয়ত করতে হয়। তারপর ডান হাতের ওপর তিনবার ও বাঁ হাতের ওপর তিনবার পানি ঢেলে ধুতে হবে। আঙুলের ফাঁকে এমনকি আংটির মাঝেও পানি প্রবেশ করাতে হবে। হাতের তালুতে পানি নিয়ে তিনবার গড়গড়ার সঙ্গে কুলি করতে হবে। তারপর ডান হাতে পানি দিয়ে নাকের ছিদ্রে পানি প্রবেশ করিয়ে বাঁ হাতের আঙুল দিয়ে চেপে তিনবার নাক পরিষ্কার করে নিতে হবে। অতঃপর পুনরায় দুই হাতে পানি ছিটিয়ে তিনবার মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলতে হবে। পরে বাঁ হাতে পানি নিয়ে ডান বাহু কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুতে হবে এবং একইভাবে ডান হাতে পানি নিয়ে বাঁ বাহু কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুতে হবে। এরপর ভেজা হাত মাথার ওপরে নিয়ে সামনে থেকে পেছনে এবং পেছন থেকে সামনে মাসেহ বা মোছার কাজ করতে হবে।


এ সময় মনে মনে কলেমা শাহাদাত পড়া যেতে পারে। অতঃপর দুই কানে তর্জনী প্রবেশ করিয়ে এবং কানের পেছনে বৃদ্ধাঙ্গুলি নিয়ে ও তা আগেপিছে করিয়ে কানের ছিদ্র ও বাইরের অংশ মুছে পরিষ্কার করতে হবে। শেষে বাঁ হাতের তালু দিয়ে ডান পায়ের ওপর, নিচ ও আঙুলের ফাঁক ধুতে হবে এবং একইভাবে ডান হাতের তালু দিয়ে বাঁ পায়ের ওপর, নিচ ও আঙুলের ফাঁক ধুতে হবে। কোথাও অজুর পানি না পাওয়া গেলে বা অসুস্থতার কারণে কেউ পানি ব্যবহারে অসমর্থ হলে সে ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে শুকনো মাটি বা বালি ব্যবহার করে পরিচ্ছন্ন হওয়ার বিধান শরিয়তে দেওয়া হয়েছে।



যেভাবে অজু করবেন সহজ ভাবে বলা হল :


অজুর মধ্যে চারটি কাজ ফরজ


১. একবার পূর্ণ চেহারা ধৌত করা। (সুরা মায়েদা ৬, সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫৩)


মুখমণ্ডলের সীমানা হলো দৈর্ঘ্যে চুলের উৎপাদনস্থল থেকে থুতনির নিচ পর্যন্ত, প্রস্থে দুই কানের লতি পর্যন্ত। (আল কামুসুল ফিকহি : ১/৩৭৩)


২. উভয় হাত কনুইসহ একবার ধৌত করা। (সুরা মায়েদা ৬, সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮০)


৩. মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ করা। (মুসলিম, হাদিস : ৪১২)


৪. উভয় পা টাখনুসহ একবার ধৌত করা। (সুরা মায়েদা ৬, বুখারি, হাদিস : ১৮০)


 

অজুর মধ্যে যেসব কাজ করা সুন্নত:


১. অজুর শুরুতে নিয়ত করা। (বুখারি, হাদিস : ১)


২. বিসমিল্লাহ পড়া। (আবু দাউদ, হাদিস : ৯২)


৩. উভয় হাতকে কবজি পর্যন্ত ধৌত করা। (মুসলিম, হাদিস : ৩৩১, মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৬২২৫)


৪. মিসওয়াক করা। (সুনানে কুবরা, হাদিস : ১৮১, আবু দাউদ, হাদিস : ৪২)


৫. কুলি করা। (মুসলিম, হাদিস : ৩৩১)


৬. নাকে পানি দেওয়া। (মুসলিম, হাদিস : ৩৩১)


৭. যদি রোজাদার না হয়, তাহলে ভালোভাবে কুলি করা এবং নাকে পানি দেওয়া। (তিরমিজি, হাদিস : ৭১৮, আবু দাউদ ১২৩)


৮. প্রতিটি অঙ্গ তিনবার করে ধোয়া। (মুসলিম, হাদিস : ৩৩১)


৯. পুরো মাথা মাসেহ করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ৯৭)


১০.  উভয় কানের ভেতরে ও বাইরে মাসেহ করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ১১৬)


১১.  দাড়ি খিলাল করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ১২৩)


১২.  আঙুল খিলাল করা। (তিরমিজি, হাদিস : ৭১৮)


১৩.  ধোয়ার সময় অঙ্গগুলোকে মেজে-ঘষে ধোয়া। (আবু দাউদ, হাদিস : ১২৭)


১৪.   প্রথম অঙ্গ শুকানোর আগেই পরের অঙ্গ ধৌত করা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৩৭, দারাকুতনি ৩৯২, আততালখিসুল হাবির : ১/২৯০)


১৫.   অঙ্গগুলো ধোয়ার সময় তারতিব তথা ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। অর্থাৎ প্রথমে মুখমণ্ডল, তারপর হাত ধোয়া, এরপর মাথা মাসেহ করা এবং পা ধোয়া। (সুরা মায়েদা, হাদিস : ৬)


১৬.     বাঁ হাত দ্বারা প্রথমে ডান হাত ধৌত করা এবং বাঁ হাত দ্বারা প্রথমে ডান পা ধোয়া। (নাসায়ি, হাদিস : ১১১)


১৭.     মাথার সামনের অংশ থেকে মাসেহ শুরু করা। (মুসলিম, হাদিস : ৩৪৬)


১৮.     গর্দান মাসেহ করা। (কানজুল উম্মাল ২৬১৪২, শরহে ইহয়া লিজজুবাইদি : ২/৩৬৫, আততালখিসুল হাবির : ১/২৮৮)



নামাজের বাইরে সাতটি কাজ ফরজ


১. শরীর পবিত্র হওয়া। (সুরা মায়িদা, আয়াত ৬, তিরমিজি, হাদিস : ১, ৩)


২. কাপড় পবিত্র হওয়া। (সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত ৪, তিরমিজি, হাদিস : ১, ৩)


৩. নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়া। (সুরা বাকারা, আয়াত ১২৫, তিরমিজি হাদিস : ১, ৩)


৪. সতর ঢাকা (অর্থাৎ পুরুষের নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত এবং নারীদের চেহারা, দুই হাত কবজি পর্যন্ত ও পায়ের পাতা ছাড়া গোটা শরীর ঢেকে রাখা। মনে রাখা আবশ্যক, পর্দার ক্ষেত্রে নারীদের পুরো শরীরই সতরের অন্তর্ভুক্ত)। (সুরা আরাফ, আয়াত ৩১, সুরা নুর, আয়াত ৩১, আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৬ হাসান, মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৬৭৫৬ হাসান, তিরমিজি ১/২২২, হাদিস : ১১৭৩, ৩৭৭ সহিহ, আবু দাউদ ১/৯৪, হাদিস : ৬৪১ সহিহ, ২/৫৬৭, হাদিস : ৪১০৪ গ্রহণযোগ্য, মারাসিলে আবি দাউদ, ৮৬ হাদিস : ২৮ গ্রহণযোগ্য)


৫. কিবলামুখী হওয়া। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৪৪, বুখারি ২/৯২৪, হাদিস : ৬২৫১)


৬. ওয়াক্তমতো নামাজ পড়া। (সুরা নিসা আয়াত : ১০৩, বুখারি ১/৭৫, হাদিস : ৫২১)


৭. অন্তরে নির্দিষ্ট নামাজের নিয়ত করা। (বুখারি শরিফ ১/২, হাদিস : ১)



নামাজের ভেতরে ছয়টি কাজ ফরজ


১.  তাকবিরে তাহরিমা, অর্থাৎ শুরুতে আল্লাহু আকবার বলা।


    (সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত ৩, বুখারি ১/১০১, হাদিস : ৮৩৩, মুসলিম ১/১৭৬, হাদিস : ৪১১, ৪১২, তিরমিজি ১/৫৫, হাদিস : ২৩৮)


২. ফরজ ও ওয়াজিব নামাজ দাঁড়িয়ে পড়া। (সুরা বাকারা, আয়াত ২৩৮, বুখারি ১/১৫০, হাদিস : ১১১৭, তিরমিজি ১/৬৬, হাদিস : ৩০৪)


৩. কেরাত পড়া (অর্থাৎ কোরআন শরিফ থেকে ন্যূনতম ছোট এক আয়াত পরিমাণ পড়া ফরজ।) (সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত ২০, বুখারি ২/৯২৪, হাদিস : ৬২৫১, তিরমিজি ১/৬৬, ৬৭, হাদিস : ৩০২, ৩০৩ সহিহ)


৪. রুকু করা। (সুরা হজ, আয়াত ৭৭, বুখারি ১/১৫০, হাদিস : ১১১৩, ১১১৪, মুসলিম ১/১৭৭, হাদিস : ৪১২)


৫. দুই সিজদা করা। (সুরা হজ, আয়াত ৭৭, বুখারি ১/১০১, হাদিস : ৭৩৩, মুসলিম ১/১৭৬, হাদিস : ৪১১)


৬. শেষ বৈঠক (নামাজের শেষে তাশাহুদ পরিমাণ বসা) (আবু দাউদ : ১/১৩৯, হাদিস : ৯৭০)


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.