গণপিটুনি ভবিষ্যদ্বাণী ও হজ্জ সংক্রান্ত
গণপিটুনি ভবিষ্যদ্বাণী
গণপিটুনি সম্পর্কে রাসুল(দ:)'র ভবিষ্যদ্বাণী
রাসুলুল্লাহ (দরুদ) বলেছেন, ‘শপথ সেই মহান সত্তার! যার হাতে আমার প্রাণ। দুনিয়া ততোক্ষণ পর্যন্ত ধ্বংস হবে না (তার পূর্বে)মানুষের প্রতি এমন একসময় আসবে;
হত্যাকারী জানবে না সে কেন হত্যা করছে আর নিহত ব্যক্তি জানবে না তাকে কেন হত্যা করা হয়েছে। বলা হলো: সেটা কীভাবে হবে? তিনি বললেন: হারাজ (গুজব,হুজুগ, অলীকতা, বিবেকহীনতা,
মূর্খতা, নির্বুদ্ধিতা, অন্যায় হত্যা,বিচারহীনতা ও সত্য মিথ্যার মিশ্রণ ইত্যাদি) এর কারণে’
(মুসলিম: ৩৯০৮)।
তিনি আরও বলেন, নবীজি (সা.)বলেছেন, ‘কিয়ামতের আগে ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, ভূমিকম্প বেশি হবে, সময় সংকীর্ণ হয়ে যাবে,ফিতনা প্রকাশ হবে, হত্যাকাণ্ড-
খুনখারাবি বেড়ে যাবে, সম্পদের আধিক্য হবে’ (বুখারি: ১০৩৬)।
সাহাবায়ে কিরাম বললেন,‘সুবহানাল্লাহ! তখন কি মানুষের বুদ্ধি–বিবেক থাকবে না?’ নবীজি(সা.) বললেন, ‘না। সে সময় মানুষ বিবেকশূন্য হয়ে যাবে এবং মনে করবে সে-ই সঠিক, আসলে তা নয়’
(মুসনাদে আহমাদ: ৩২: ৪০৯)।
অন্যত্র রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,কিয়ামতের আলামত হলো ‘হারাজ’! বলা হলো ‘হারাজ’ কী? তিনি বললেন, ‘মিথ্যা ও হত্যা। এই হত্যা হবে অজ্ঞতাপ্রসূত, স্বার্থপরতায়
এবং খামখেয়ালিপনায়’
(ফাতহুলবারি-১৩:৩৪)।
অথচ আল্লাহ তা'আলা কোরআনে ঘোষণা করেন, ‘তোমরা ন্যায়বিচার ব্যতীত কোনো মানুষ হত্যা করবে না, যা আল্লাহ হারাম
করে দিয়েছেন’ (৬: ১৫১)। তিনি আরও
বলেন, ‘কোনো মুমিন কোনো
মুমিনকে খুন করতে পারে না’ (৪: ৯২)
========== 0000 ===========
![]() |
মুসলিম জীবনে হজ্ব একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের এক অনন্য নিদর্শন এটি। প্রতি বছর লাখ লাখ মুসলমান বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করার জন্য। একই কাতারে শামিল হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তারা তাওয়াফ করেন আল্লাহর ঘর। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি ভ্রাতৃত্বের এমন নিদর্শন পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। এটা এমন একটি মিলন মেলা, যেখানে সবার মনে একটাই আশা ও উদ্দেশ্য থাকে তা হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এখানে পার্থিব কোনো চাওয়া-পাওয়ার হিসাব থাকে না, বরং অর্থ ও পরিশ্রম বিসর্জন দিয়েই তারা জড়ো হয় একসঙ্গে। তাই কারও মনে কারও জন্য থাকে না কোনো হিংসা-বিদ্বেষ। থাকে শুধুই ভ্রাতৃত্ব। এভাবে হজ নামক ইবাদতটিকে উদ্দেশ্য করে সবুজ চাদরে মোড়ানো আল্লাহর ঘরটিকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব। যতদিন আল্লাহর এই ঘর জমিনের ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে, যতদিন মুসলমানদের অস্তিত্ব টিকে থাকবে, যতদিন হজ নামক ইবাদত চালু থাকবে, ততদিন অটুট থাকবে এই ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বহুধা বিভক্ত মুসলিম জাতিকে বছরে অন্তত একটিবারের জন্য হলেও ঐক্যবদ্ধ করে হজ্ব। তাই হজ্বের গুরুত্ব শুধু একটি আনুষ্ঠানিক ইবাদতের বিবেচনায় নয়, বিশ্ব মুসলিমের মিলন মেলা হিসেবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। এই মিলন মেলার আয়োজক স্বয়ং আল্লাহ তা'য়ালা। আল্লাহ চান তার বান্দারা ঐক্যবদ্ধ থাকুক। তাই তিনি ইবাদতগুলোকে সেভাবেই পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। জামাতের সঙ্গে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, সপ্তাহে একবার জুমার নামাজের জামাত, বছরে দু'বার ঈদের নামাজের জামাত এবং বছরে একবার হজ্বকে উপলক্ষ করে মক্কায় জড়ো হওয়া, এসবই মুসলিমদের মাঝে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টির উদ্দেশ্যে। মহান আল্লাহ বান্দার সিজদা নেওয়ার জন্য, ইবাদত নেওয়ার জন্য ব্যক্তিগতভাবেই নির্দেশ দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতগুলোকে জামাতবদ্ধভাবে করার নির্দেশ দিয়েছেন। উদ্দেশ্য একটাই, নিজের বন্দেগির পাশাপাশি প্রিয় বান্দারা যেন ঐক্যের শিক্ষা পায়। তারা যেন বুঝতে পারে, মুসলমানদের ঐক্য আল্লাহর কাছে কত গুরুত্বপূর্ণ। মুসলমানদের ঐক্য বিশ্বাস ও আদর্শের। এ ঐক্য বংশের নয়, স্থানের নয়। আমরা লক্ষ্য করতে পারি, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জুমার নামাজ এবং ঈদের নামাজ নির্দিষ্ট পাড়া-মহল্লা কিংবা দেশের মুসলিমদের মাঝে ঐক্য সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু বিশ্বের সব মুসলিমের মাঝে ঐক্য সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে একমাত্র যে ইবাদতটি, তা হচ্ছে হজ্ব। হজ্ব করতে যখন সবাই সমবেত হয়, তখন কেউ ভাবে না তার পাশের লোকটি কালো নাকি সাদা, সম্ভ্রান্ত বংশের, না দাস বংশের, মধ্যপ্রাচ্যের আয়েশি জীবনযাপনকারী কোনো রাজা-বাদশাহর সন্তান, নাকি আফ্রিকার কোনো নিগ্রো কৃষকের সন্তান। আর এসব ভাবার সুযোগই-বা কোথায়, যেখানে আল্লাহর নির্দেশে সবাইকে গরিমা প্রকাশকারী পোশাক খুলে অতি সাধারণ সাদা রঙের পোশাক পরিধান করতে হয়! যেখানে টুপি-পাজামা-পাগড়ি পরিধান করা নিষিদ্ধ, এমনকি মাথার চুল পর্যন্ত ছেঁটে ফেলতে হয়, সেখানে কোথা থেকে আসবে অর্থ, বংশ কিংবা বর্ণের অহংবোধ? আল্লাহু আকবার, হজ ব্যতীত এমন কোনো অনুষ্ঠান আছে, যা এত ভিন্ন ভিন্ন দেশের, এত ভিন্ন ভিন্ন বংশের, বর্ণের মানুষকে একইরূপে চিত্রিত করতে পারে? ঐক্যের আরও অপূর্ব চিত্র ফুটে ওঠে একসঙ্গে চিরশত্রু শয়তানকে উদ্দেশ করে পাথর নিক্ষেপের মধ্যে, সাফা-মারওয়াকে উদ্দেশ করে একসঙ্গে দৌড়ানোর মধ্যে, আরাফার ময়দানে একসঙ্গে অবস্থান ও একসঙ্গে মিনায় গমনের মধ্যে এবং আল্লাহর রাহে একসঙ্গে পশু কোরবানির মধ্যে।
প্রতি বছর মক্কা অভিমুখী লাখ লাখ মানুষের হজযাত্রা যেন ইবরাহিমের (আ.) সেই দুয়ারই প্রতিফলন, যেই দুয়া তিনি প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ:)কে আল্লাহর ঘরের পাশে রেখে যাওয়ার সময় করেছিলেন। দুয়াটি সুরা ইবরাহিমে বর্ণিত হয়েছে_"হে আমাদের রব, আমি আমার সন্তানকে তোমার সম্মানিত ঘরের পাশে একটি তৃণলতাহীন উপত্যকায় রেখে যাচ্ছি; হে রব, তারা যেন নামাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। সুতরাং তুমি এদের (ইসমাইল ও তার বংশধর) প্রতি মানুষের অন্তরের ভালোবাসা সৃষ্টি করে দাও। আল্লাহ তার এই বন্ধুর দোয়া কবুল করেছেন এবং তাকে এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তুমি আমার সঙ্গে কাউকে শিরক করো না এবং তাওয়াফকারী, নামাজ আদায়কারী, রুকুকারী ও সিজদাকারীদের জন্য আমার ঘরকে পবিত্র করো। আর মানুষের মাঝে হজের ঘোষণা দিয়ে দাও, তারা তোমার দিকে আগমন করবে পদব্রজে এবং প্রতিটি ক্ষীণকায় উটের পিঠে করে দূর-দূরান্ত থেকে। আল্লাহ যে নবী ইবরাহিমের দোয়া কবুল করেছেন, তার প্রমাণ হজের ব্যবস্থাপনা। এই হজ্ব উপলক্ষ্য করেই বিশ্বের প্রতিটি প্রান্ত থেকে মুসলমানরা হযরত ইবরাহিম (আ:) এর বংশধরদের ভালোবাসায়, আল্লাহর ঘরের ভালোবাসায় লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগমন করে। এখানে মৃত্যুবরণ করাকেও সৌভাগ্যের বিষয় মনে করে।
দুঃখের বিষয়, মুসলমানরা হজ্বে গিয়ে ভ্রাতৃত্বের অনন্য নজির স্থাপন করলেও নিজ নিজ দেশে তারা একে অপরের শত্রু। বিভিন্ন দেশে তারা নিজেরাই নিজেদের শত্রু হয়ে আছে। এক মুসলিমের কাছে অপর মুসলিমের জীবনের নিরাপত্তা নেই। ক্ষমতার মোহে হত্যা করছে একে অপরকে, সম্পদ ও সম্মানহানি করছে একে অপরের! অথচ এই হজ্বের ভাষণেই রাসুল (দ.) ঘোষণা করেছেন, আজকের এই দিন, এই স্থান এবং এই মাস যেমনিভাবে তোমাদের কাছে পবিত্র, একইভাবে পবিত্র তোমাদের একের নিকট অপরের জীবন, সম্পদ ও সম্মান। বর্তমানে আমরা হজ্ব করি, কিন্তু এর শিক্ষাকে কাজে লাগাই না। আমরা আজ দেশে দেশে বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের ক্ষতি নিজেরাই করছি! অথচ প্রতি বছর হজ্বগুলোতে হাজ্বীদের সংখ্যা বাড়ছে, কমছে না। তাহলে হজ্বের মতো একটা ইবাদত কি মুসলিমদের পারস্পরিক হানাহানি বন্ধে এবং তাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারছে না? অবশ্যই পারত যদি আমরা হজ্বের শিক্ষা অন্তরে সবসময় লালন করতে পারতাম। আমাদের দলীয় গোঁড়ামি আর অন্ধত্ব হজ্বের শিক্ষা বাস্তবায়ন থেকে দূরে রাখছে।
তাই আমাদের উচিত, হজ্বের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত না হয়ে চিরন্তন বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হওয়া। এখানেই দুনিয়াতে মুসলমানদের হজ্বের সার্থকতা। আর আখেরাতে হজ্বের সার্থকতা হচ্ছে জান্নাত লাভ। রাসুল (দ:)এর বাণী : 'কবুল হজ্বের সওয়াব জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।'
কোন মন্তব্য নেই